ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া বাজার সংলগ্ন রাস্তার ধারের ধান ক্ষেত থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

রাণীশংকৈলে ধানক্ষেতে মিলল কোচিং শিক্ষকের মরদেহ, পরিবারে দাবি হত্যা
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া বাজার সংলগ্ন রাস্তার ধারের ধান ক্ষেত থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ওই শিক্ষক ভরনিয়া চেংবাড়ী সম্পদবাড়ি এলাকার নুরুল হোসেনের ছেলে হোসাইন আলী। তিনি পেশায় একজন কোচিং শিক্ষক ছিলেন।
স্থানীয়রা ও পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে হাঁটাহাঁটি করার সময় রাস্তার ধারের ধান খেতে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন নারী। পরে স্থানীয়দের খবর দিলে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে মরদেহের উদ্ধার করে প্রাথমিক সুরতহাল করে পুলিশ। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে পরিবারের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে তাঁকে পরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। নিহতের বোন রুমি, ছোট ভাই আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, তাঁদের গ্রামেরই অনুকুল ও ইশার সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের মামলা ছিল। ইশা ও অনুকুল আপন ভাই। অনুকুলের মেয়ের সঙ্গে তার ভাই হোসাইনের প্রেম ভালোবাসা থেকে বিয়ে হয়েছিল। সেই বিয়ে মেনে নেইনি অনুকুল। পরে মামলা করে হোসাইনের কাছ থেকে তার মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়েছিল অনুকুল। কিন্তু হোসাইনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল তাঁরা।
নিহত হোসাইনের ভাই আব্দুর রাজ্জাক জানান, কিছুদিন আগে তাঁর ভাইকে রাস্তায় আটকিয়েছিন অনুকুল। এ সময় তাকে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দেখে নেবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে নিহতের বোন রুমি জানান, কোচিং সেন্টারে কিছুদিন আগে পড়ায় গাফিলতির কারণে এক শিক্ষার্থীকে শাসন করেছিলেন হোসাইন। সে কারণে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়েছিল ভরনিয়া এলাকার মুসা মাস্টার। নিহতের বোনের দাবি, অনুকুল, ইশা ও মুসা মাস্টার মিলে তাঁর ভাইকে হত্যা করে মরদেহ ধান খেতে ফেলে রেখেছে। তাঁদের বিচার দাবি করেন তিনি।
নিহত হোসাইনের মা হোসনা খাতুন বলেন, ‘কিছুদিন আগে এক শিক্ষার্থীকে পড়া গাফিলতির কারণে শাসন করার অভিযোগে মুসা মাস্টার মারের বদল মার নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল।’ তিনি দাবি করেন, অনুকুল, ইশার সঙ্গে ছিল মামলা। তাই অনুকুল, ইশা ও মুসা মাস্টার মিলে পরিকল্পিতভাবে তাঁর ছেলেকে হত্যা করেছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত মুসা মাস্টার এরই মধ্যে একটি হত্যা মামলার প্রথম আসামি হিসেবে দীর্ঘদিন কারাবাসে ছিলেন।
অভিযুক্ত অনুকুল ও ইশার বক্তব্য নিতে তাঁদের বাড়িতে গেলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি। তবে আরেক অভিযুক্ত মুসা মাস্টার বলেন, ‘কোচিংয়ের শিক্ষার্থীকে মারধরের কারণে ওই শিক্ষার্থীর বাবা সফিকুল আমার কাছে বিচার নিয়ে এসেছিল। তবে কোচিংয়ের বিষয়ের কারণে সেই বিচার আমি করতে চাইনি। পরে চেয়ারম্যানকে দেখিয়ে দিয়েছিলাম।’ হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘কাউকে আমি হুমকি দিইনি।’
ধর্মগড় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ‘নিহত কোচিং শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধরের একটি বিচার এসেছিল। তবে সেটি স্থানীয় বিএসসি শিক্ষক মোশাররফ বিষয়টির মীমাংসা করে দিয়েছিলেন। সেটি নিয়ে কোনো অভিযোগ আর ছিল না।’
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘মরদেহের ডান হাতে ও বুকে ক্ষত পাওয়া গেছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত হলে মৃতের রহস্য উদ্ঘাটন হবে।’
নিহতের স্বনদের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘নিহত শিক্ষকের পরিবার মৃতের জন্য দায়ী করে যাদের নাম বলছে, তাঁদের বিষয়েও আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’